দশম অধ্যায়
চরিতমালা
বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে অনেক রাজা, মন্ত্রী, শ্রেষ্ঠী, উপাসক-উপাসিকা, ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের কর্ম ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে তাঁরা এখনও অমর হয়ে আছেন। বৌদ্ধসাহিত্যে এসব মহান ব্যক্তির জীবনচরিত পাওয়া যায়। তাঁদের জীবনাদর্শন অনুকরণীয়, যা অধ্যয়ন করে নৈতিক ও মানবিক জীবন গঠন করা যায়। এ অধ্যায়ে আমরা বুদ্ধশিষ্য সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন, বুদ্ধশিষ্যা পূর্ণিকা থেরী, বিশিষ্ট উপাসিকা বিশাখা, রাজা প্রসেনজিত, এবং বাঙালির কুলগৌরব ভিক্ষু শীলভদ্র সম্পর্কে অধ্যয়ন করব ।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
* বৌদ্ধ মনীষীদের পরিচয় দিতে পারর ;
* থের-থেরী ও বিশিষ্ট মনীষীদের জীবনী পাঠ করে তাঁদের আদর্শ ও জীবন চরিত ব্যাখ্যা করতে পারব।
পাঠ : ১
সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন
বুদ্ধ-প্রবর্তিত সঙ্ঘে সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়নের অবস্থান ছিল শীর্ষে। তাঁরা ছিলেন বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক । শ্রাবক শব্দের অর্থ হলো শিষ্য বা যিনি ধর্মীয় বিষয় শ্রবণ-ধারণ-পালন করেন। অতএব, অগ্রশ্রাবক হলো শিষ্যদের মধ্যে অগ্রগণ্য। বুদ্ধের ধর্ম শ্রবণ, ধারণ ও পালনে বুদ্ধশিষ্যদের মধ্যে সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন অগ্রগণ্য ছিলেন। সারিপুত্র জ্ঞানে এবং মৌদ্গল্যায়ন ঋদ্ধিশক্তিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। অগ্রশ্রাবক সারিপুত্র ধর্মসেনাপতি নামেও পরিচিত ছিলেন। ধর্ম দেশনার সময় সারিপুত্র বুদ্ধের ডানদিকে মৌদ্গল্যায়ন বাম দিকে বসতেন। তাই তাঁদের বুদ্ধের দক্ষিণ ও বাম হস্ত হিসেবে অভিহিত করা হতো।
সারিপুত্রের গৃহী নাম উপতিষ্য। সারি ব্রাহ্মণীর পুত্র ছিলেন বলে তাঁকে সারিপুত্র বলা হতো । তিনি নালন্দা ও ইন্দ্রশিলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত উপতিষ্য গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কোনো কোনো তথ্যমতে, তিনি নালক নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উপতিষ্য নামেও পরিচিত ছিলেন। সম্ভবত এটি ছিল তাঁর প্রকৃত নাম । কিন্তু পালি সাহিত্যে তাঁকে এ-নামে অভিহিত করতে তেমন একটা দেখা যায় না । গ্রামের নামের সাথে ব্যক্তির নামের সাদৃশ্য থেকে অনুমান করা যায় যে, তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। কিংবা তাঁদের বংশের নামেই গ্রামটি পরিচিত ছিল। তাঁর পিতার নাম জানা যায় না। তবে তিনি একজন উচ্চবংশীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সারিপুত্রের তিন ভাই ও তিন বোন ছিলেন । ভাইদের নাম ছিল চুন্দ, উপসেন এবং রেবত। বোনদের নাম ছিল চালা, উপচালা এবং শিশুপচালা। তাঁর সকল ভাই-বোন বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী হন। সারিপুত্র খুবই প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন।
অপরদিকে, মোগ্গলী ব্রাহ্মণীর পুত্র ছিলেন বলে মৌদ্গল্যায়নকে মোগলীপুত্র বলা হতো। তিনি সারিপুত্রের জন্মদিনে রাজগৃহের কোলিত নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সে গ্রামের প্রধান ব্যক্তিত্ব। সম্ভবত তাঁর বংশের নামে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছিল। গ্রামের ঐতিহ্যসম্পন্ন কুল বা বংশের পুত্র ছিলেন বলে তাঁকে কোলিত নামেও ডাকা হতো।
সারিপুত্রের পরিবারের সঙ্গে মৌদগল্যায়নের পরিবারের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল। ফলে তাঁরা দুজনেই ছেলেবেলা থেকে পরম বন্ধু ছিলেন। দুজনে বাস করতেন পাশাপাশি দুটি গ্রামে। তাঁরা প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী ছিলেন।
একদিন দুই বন্ধু একত্রে একটি নাটক দেখতে যান। নাটক দেখে তাঁদের মনে বৈরাগ্য ভাব জাগ্রত হয়। তাঁরা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতঃপর গৃহত্যাগ করে তাঁরা সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্রের শিষ্যত্ব বরণ করেন। সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্র ছিলেন একজন পরিব্রাজক ব্রাহ্মণ । অল্প দিনের মধ্যে তাঁরা গুরুর কাছ থেকে সব বিদ্যা শিখে নেন। তাঁরা গুরুকে জিজ্ঞেস করেন, আচার্য, এতে তো পরম মুক্তির কোনো সন্ধান নেই। আমরা এমন কিছু লাভ করতে চাই, যা লাভ করলে বারবার জন্ম দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, মৃত্যু দুঃখ প্রভৃতি ভোগ করতে হবে না। গুরু সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্র এ-প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকেন । তিনি ছিলেন মূলত “বিক্ষেপবাদী' বা ‘সংশয়বাদী’। এ মতবাদীরা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না, সর্বদা ইতস্তত অবস্থায় থাকেন। অতঃপর, সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন সমগ্র জম্বুদ্বীপ পরিভ্রমণ করে বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন। কিন্তু কারো নিকট সন্তোষজনক উত্তর ও মুক্তিপথের সন্ধান পেলেন না। তারপর তাঁরা দুজন দুই পথে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রত্যাশিত পথপ্রদর্শক গুরুর সন্ধান পেলে একে অপরকে জানাবেন – এরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দুজন দুই দিকে যাত্রা করেন ।
যাত্রার কিছুদিন পর সারিপুত্র রাজগৃহে বিচরণ করছিলেন। সেখানে একদিন বুদ্ধের শিষ্য অশ্বজিৎ ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করছিলেন। এমন সময় অশ্বজিৎ-এর সঙ্গে সারিপুত্রের দেখা হয়। অশ্বজিৎ-এর সৌম্য চেহারা দেখে সারিপুত্র মুগ্ধ হন । তিনি অশ্বজিৎকে জিজ্ঞেস করেন, ভন্তে, আপনি কার শিষ্য? আপনার শাস্তা কে ? তিনি কোন বাদী? অশ্বজিৎ বলেন, শাক্যবংশীয় মহাশ্রমণ গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ আমার গুরু। সারিপুত্র তখন বুদ্ধের ধর্মমত জানতে চান। তখন অশ্বজিৎ তাঁকে বুদ্ধভাষিত একটি গাথা বলেন। গাথাটির মর্মবাণী হলো : পৃথিবীর সকল কিছুর উৎপত্তির সাথে কারণ নিহিত থাকে। কারণ ছাড়া কোনো কিছুই উৎপন্ন হয় না। বুদ্ধ বলেছেন, সেই কারণেরও নিরোধ আছে। পরম নির্বাণ লাভের মাধ্যমেই এই শান্তি অর্জিত হয়। এটিই বুদ্ধের মতবাদ। অতএব বুদ্ধ নির্বাণবাদী। গাথাটি শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হন। অতপর সারিপুত্র গিয়ে মৌদ্গল্যায়নকে বিষয়টি জ্ঞাত করেন। সারিপুত্রের কাছে মৌদ্গল্যায়ন গাথাটি শ্রবণ করে স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। অতঃপর তাঁরা বুদ্ধের কাছে যাওয়ার জন্য স্থির করেন। সারিপুত্র কৃতজ্ঞতাস্বরূপ গুরু সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্রকেও বুদ্ধের কাছে নিয়ে যেতে ইচ্ছা পোষণ করলেন। কিন্তু অনেক অনুনয় করার পরও তিনি বুদ্ধের কাছে যেতে রাজি হলেন না। তখন সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্রের পাঁচশত শিষ্যসহ বুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । এতে সঞ্জয় বেলট্ঠপুত্র অত্যন্ত দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ হলেন। সে-সময় বুদ্ধ সারনাথে ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র' দেশনা করে রাজগৃহের বেণুবন আরামে সশিষ্য বসবাস করছিলেন ।
সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন অনুগামীদের নিয়ে রাজগৃহে বুদ্ধের সমীপে পৌঁছলেন। এ সময় বুদ্ধ শিষ্যদের ধর্মদেশনা করছিলেন। বুদ্ধ দূর থেকে তাঁদের আসতে দেখেন এবং দিব্য জ্ঞানে তাঁদের অভিলাষ জ্ঞাত হলেন। বুদ্ধ তাঁদের ভিক্ষু ধর্মে দীক্ষিত করলেন। সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন ব্যতীত অনুগামীগণ দীক্ষাস্থলেই অর্হত্ব ফল লাভ করলেন। দীক্ষিত হওয়ার সাত দিনে মৌদগল্যায়ন এবং পনেরো দিনে সারিপুত্র অর্থত্ব ফলে উন্নীত হন। দীক্ষার দিন ভিক্ষু-ভিক্ষুণী সমাবেশে বুদ্ধ সারিপুত্র এবং মৌদ্গল্যায়নকে অগ্রশ্রাবক হিসেবে ঘোষণা করে পাতিমোক্ষ দেশনা করেন। এই পদ লাভের জন্য তাঁদেরও জন্ম-জন্মান্তরের সাধনা ছিল। বুদ্ধের ভিক্ষুসঙ্ঘের মধ্যে আশিজন মহাশ্রাবক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এ দুজন ছিলেন অগ্রশ্রাবক ।
সারিপুত্র ছিলেন মহাপ্রজ্ঞাবান। তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ভাষণগুলো তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারতেন। সারিপুত্রের প্রধান উপদেশ হলো : “মানুষ মরণশীল। যে- কোনো সময় মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই শীলাদি ধর্ম পরিপূর্ণ কর। যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ কর । দুঃখে পতিত হয়ে বিনাশ প্রাপ্ত হয়ো না। শত্রুর ভয়ে নগরের ভিতর-বাহির যেমন সুরক্ষিত করা হয়, তেমনি নিজেকে সুরক্ষিত করে সর্বপ্রকার পাপ হতে মুক্ত রাখো। যারা শীলাদি পালন করে না, যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করে না, তারা নরকে পতিত হয়ে শোক করে থাকে।”
মৌদ্গল্যায়ন ছিলেন ঋদ্ধিশক্তিতে অদ্বিতীয়। প্রজ্ঞায় সারিপুত্রের পরে ছিল তাঁর স্থান। এই ঋদ্ধিশক্তিই ছিল তাঁর অফুরন্ত কর্মশক্তির উৎস। ঋদ্ধিবলেই তিনি স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল এই ত্রিভুবন ঘুরে ঘুরে বুদ্ধের ধর্মপ্রচার করতেন। এমনকি নরকে গিয়ে নারকীয় দুঃখ দেখে এসে অন্যদের কাছে উপদেশ দিতেন। এজন্য তার দেশনা ছিল সবসময় চিত্তগ্রাহী। তাঁর দেশনায় নতুন নতুন বিষয় যেমন উপস্থাপিত হতো তেমনি পরিবেশন করা হতো সরল ও প্রাঞ্জল ব্যাখ্যায় ।
অর্হত্ব ফলে উন্নীত হয়ে মৌদ্গল্যায়ন তাঁর অনুগামী ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে গাথায় তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। এতে তাঁর জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতাও নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর ভাষিত কয়েকটি গাথার সারমর্ম এখানে তুলে ধরা হলো : “এ দেহ অশুচি, দুগন্ধপূর্ণ, বিষ্ঠা ও কৃমিকুলের আধার। এ দেহের প্রতি কেন মমতা করছ ? শরীরের নয় দ্বার দিয়ে দিবারাত অশুচি নির্গত হচ্ছে। বিষ্ঠা দেখে যেমন সবাই এড়িয়ে চলে, তেমনি ভিক্ষুগণ এই অশুচিপূর্ণ দেহকে বর্জন করে।”
সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন এই দুই অগ্রশ্রাবক বুদ্ধের পূর্বে পরিনির্বাণ লাভ করেন। সারিপুত্রের পনেরো দিন পর মৌদ্গল্যায়ন পরিনির্বাণ লাভ করেন। অর্হত্ব ফলে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে তাঁরা তাঁদের মৃত্যু সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। তাই পরিনির্বাণের পূর্বে যথাসময়ে তাঁরা বুদ্ধকে বন্দনা করে যথাপোযুক্ত স্থানে পরিনির্বাণের অনুমতি গ্রহণ করেছিলেন। সারিপুত্র থের নির্বাণপ্রাপ্ত হন নিজ জন্মস্থানে মাতৃগৃহে। মৌদ্গল্যায়ন থের পূর্বজন্মের কৃতকর্মের ফলে কালশৈল পর্বতে ঘাতক কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে নির্বাণ লাভ করেন। কারণ অতীতজন্মে তিনি তাঁর স্ত্রীর প্ররোচনায় বয়োবৃদ্ধ অন্ধ পিতামাতাকে গভীর বনে জন্তু-জানোয়রের সামনে মৃত্যুর মুখে ফেলে এসেছিলেন। পরিণতিতে তাঁকেও এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হলো। মৌদ্গল্যায়নের পবিত্র দেহধাতু বুদ্ধের নির্দেশে বেণুবন বিহারের পূর্বদ্বারে রাখা হয় । শ্রেষ্ঠী অনাথপিণ্ডিক তথাগত বুদ্ধের অনুমতি নিয়ে সারিপুত্রের দেহভস্মের ওপর শ্রাবস্তীতে এক স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুই অগ্রশ্রাবক প্রাঞ্জল ভাষায় বুদ্ধবাণী ব্যাখ্যা করতে পারতেন। মহৎ কর্মের জন্য বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে তাঁরা অমর হয়ে আছেন ।
তথাগত বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়নের জীবন-চরিত পাঠে আমরা এই শিক্ষা লাভ করতে পারি যে, একাগ্রতা ও অধ্যাবসায় থাকলে অবশ্যই মানুষ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছুতে পারে এবং মানুষের জীবনের কোনো কর্মই বৃথা যায় না। ভালো বা মন্দ কর্মের জন্য যথোপযুক্ত ফল রয়েছে। যেমন অতীত কর্মের জন্য মৌদ্গল্যায়নকে ঘাতকের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তাই গোপনে বা কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে কখনোই কোনো মন্দ কাজ করা উচিত নয়।
অনুশীলনমূলক কাজ সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন প্রথমে কার শিষ্য ছিলেন? সঞ্চয় বেলট্ঠীপুত্র কোন মতবাদী ছিলেন? সারিপুত্রের প্রধান উপদেশ কী ছিল? মৌদ্গল্যায়ন ভাষিত গাথাগুলোর মর্মকথা লেখ । |
পাঠ : ২
বিশাখা
বুদ্ধের সময় অঙ্গরাজ্যের ভদ্দিয় নগরে উচ্চবংশজাত ধনবান এক উপাসক ছিলেন। তাঁর নাম ছিল মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী। ধনঞ্জয় নামে তাঁর এক পুত্র ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সুমনাদেবী। তাঁরা অত্যন্ত ধার্মিক এবং দান ও সেবাপরায়ণ ছিলেন। তাঁদেরই কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশাখা। ছোটকাল থেকে বিশাখা অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন। দান ও বিবিধ কল্যাণকর্মের জন্য তাঁর খুবই সুখ্যাতি ছিল। দানকর্ম ও ভিক্ষুসঙ্ঘকে সেবা করার জন্য বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
এক সময় সেল নামক এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর অনুগামী প্রায় তিন শতাধিক শিষ্যকে দীক্ষা প্রদানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বুদ্ধ সশিষ্য ভদ্দিয় নগরে এসেছিলেন। বুদ্ধের আগমন উপলক্ষে বিশাখার পিতামহ মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী বিশাখাকে নিয়ে বুদ্ধ দর্শনে গিয়েছিলেন। তখন বিশাখার বয়স ছিল সাত বছর। বিশাখার সাথে ছিল পাঁচশত সখী, পাঁচশত পরিচারিকা এবং পাঁচশত সুসজ্জিত রথ। বিশাখার সুযোগ হয় বুদ্ধকে কাছে গিয়ে বন্দনা করার। বুদ্ধ বিশাখার জন্মান্তরে অর্জিত পুণ্যরাশি অবগত হয়ে তাঁকে ধর্ম দেশনা করেন। উপস্থিত সকলে গভীর শ্রদ্ধাচিত্তে বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শ্রবণ করেন। বুদ্ধের ধর্ম দেশনা শ্রবণ করে পাঁচশত সখীসহ বিশাখা এবং মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী শ্রদ্ধাবণত হয়ে ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে পরদিন তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করেন। বুদ্ধ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং পরদিন যথাসময়ে তিনি সশিষ্য মেণ্ডক শ্রেষ্ঠীর গৃহে উপস্থিত হন। মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আপ্যায়ন করেন। বুদ্ধ তাঁদের ধর্ম দেশনা করেন। এতে বিশাখাসহ মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা অপার আনন্দ অনুভব করেন। তাঁরা ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে আরও পনেরো দিনের জন্য নিমন্ত্রণ করলেন। বুদ্ধ তাঁদের শ্রদ্ধা ভক্তি দেখে সম্মতি প্রদান করেন। ফলে শৈশব কালেই বিশাখা বুদ্ধের ধর্ম দেশনা শ্রবণ এবং বুদ্ধকে সেবা করার এক অপূর্ব সুযোগ লাভ করেন।
কালক্রমে বিশাখা বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠেন। পিতামাতা তার বিয়ের জন্য তৎপর হলেন। সে সময় শ্রাবস্তীতে মিগার নামে এক শ্রেষ্ঠী ছিলেন। তাঁর পুণ্যবর্ধন নামে এক পুত্র ছিল। পারিবারিক উদ্যোগে পুণ্যবর্ধনের সঙ্গে বিশাখার বিয়ে হয়। বিশাখার বাবা বিশাখাকে বহু দাসদাসী, রথ ও মহামূল্য মণিমুক্তা উপহার দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে পাঠান। শ্বশুরালয়ে পরস্পর শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাসের জন্য বিশাখার পিতা বিশাখাকে দশটি উপদেশ প্রদান করেন। এই দশটি উপদেশ সর্বজনীন উপদেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়। এ-দশটি উপদেশ হলো :
১. ঘরের আগুন বাহিরে নিও না। অর্থাৎ শ্বশুর বাড়ির কারো দোষ দেখলে তা বাইরের কাউকে বলবে না।
২. বাইরের আগুন ঘরে এনো না। অর্থাৎ প্রতিবেশী কেউ শ্বশুর বাড়ির কারো দোষের কথা বললে তা তোমার শ্বশুর বাড়ির কারো কাছে প্রকাশ করো না।
৩. যে দেয় তাকে দেবে। অর্থাৎ কেউ কিছু ধার নিয়ে ফেরত দিলে তাকে ধার দেবে।
৪. যে দেয় না তাকে দিয়ো না। অর্থাৎ যে-ব্যক্তি কোনকিছু ধার নিয়ে ফেরত দেয় না তাকে ধার দিয়ো না ।
৫. যে দেয় অথবা না দেয় তাকেও দেবে। অর্থাৎ কোনো আত্মীয় গরিব হলে, ধার নিয়ে ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে তাকেও ধার দিয়ো ।
৬. সুখে আহার করবে। অর্থাৎ শ্বশুর বাড়ির গুরুজনদের খাওয়া শেষ হলে এবং অন্যান্যদের খাওয়া সম্পর্কে খবর নিয়ে তারপর নিজের আহার গ্রহণ করবে।
৭. সুখে উপবেশন করবে। অর্থাৎ এমন স্থানে বসবে যে স্থান থেকে গুরুজনদের দেখে উঠতে না হয় ৷
৮. সুখে শয়ন করবে। অর্থাৎ যাবতীয় গৃহকর্ম সমাধা করে গুরুজনদের শয়নের পর শয়ন করবে।
৯. অগ্নির পরিচর্যা করবে। অর্থাৎ গুরুজন ও ছোটদের সচেতনতার সাথে প্রয়োজনীয় সেবা শুশ্রূষা
করবে। ১০. শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী প্রভৃতি গুরুজনদের দেবতাজ্ঞানে ভক্তি করবে।
বিবাহ অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে আজও এই উপদেশসমূহ প্রদান করা হয়। পারিবারিক
সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে এ উপদেশগুলোর ভূমিকা অপরিসীম বিশাখার শ্বশুর মিগার শ্রেষ্ঠী এ বিয়েতে সাত দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন। কোশলরাজ প্রসেনজিতসহ
বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিয়েতে যোগদান করেছিলেন।
বিশাখা শ্বশুরালয়ে সমস্ত কাজ নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করার চেষ্টা করতেন। এতে শ্বশুর-শ্বাশুড়িও তাঁর প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু মিগার শ্রেষ্ঠী ছিলেন কিছু ভ্রান্তধারার অনুসারী সন্ন্যাসীর ভক্ত। এ সন্ন্যাসীরা বিবস্ত্র থাকতেন। মিগার শ্রেষ্ঠীর গৃহে তারা প্রায় আসতেন। একদিন গুরুপূজা উপলক্ষে মিগার শ্রেষ্ঠী
বিশাখাকে তাঁদের সামনে নিয়ে যান। বিশাখা দেখলেন গুরু সম্পূর্ণ বিবস্ত্র। বিশাখা এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। সন্ন্যাসীরা বিশাখার ভাব বুঝতে পারেন। তাঁরা শ্রেষ্ঠীকে বললেন, এই রমণী গৌতমের শিষ্যা, একে ঘর থেকে বের করে দাও। তা না হলে তোমার সর্বনাশ হবে। এতে শ্রেষ্ঠী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
একদিন মিগার শ্রেষ্ঠী মহাপালঙ্কে বসে মধুপায়েস খাচ্ছিলেন। এমন সময় এক পিণ্ডাচারী বৌদ্ধভিক্ষু মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে ভিক্ষার জন্য আসেন। শ্রেষ্ঠী তাঁকে দেখেও কোনোকিছু দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। শ্বশুরের অনুমতি ছাড়া বিশাখার পক্ষেও কোনোকিছু দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বিশাখা আগন্তুক ভিক্ষুকে বললেন, ভন্তে, আপনি অন্যত্র যান। আমার শ্বশুর বাসি খাবার খাচ্ছেন। মিগার শ্রেষ্ঠী একথা শুনে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হলেন। বিশাখাকে বললেন, তুমি এ বাড়ি থেকে চলে যাও। তিনি বিশাখাকে বের করে দিতে দাসদাসীদের আদেশ দিলেন। কিন্তু বাড়ির অন্তঃপুরের সকলেই ছিল বিশাখার ভক্ত । একথা শুনে বিশাখা বললেন, আমি ক্রীতদাসী নই, আমাকে ইচ্ছা করলে তাড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার পিতা আটজন সম্ভ্রান্ত নীতিজ্ঞলোককে সাক্ষী করেই আমাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়েছেন। তাঁদের আহ্বান করুন। তাদের বিচারে দোষী হলে আমি চলে যাব। অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে আমি শ্বশুরালয় ত্যাগ করব না। ক্রোধগ্রস্ত মিগার শ্রেষ্ঠী সাক্ষীদের আহ্বান করলেন। তাঁরা বিশাখাকে কেন ঐরূপ ব্যবহার করলেন তা জানতে চান। উত্তরে বিশাখা বললেন, আমার শুশুর ‘বাসি' খাবার খাচ্ছেন বলার অর্থ এই যে, তিনি পূর্বজন্মের পুণ্যফলের প্রভাবে অর্জন করা খাবার খাচ্ছেন। নীতিজ্ঞলোকদের বিচারে বিশাখার জয় হয়।
আর একদিন রাতে বিশাখা ঘরের বাতি হাতে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন। শ্রেষ্ঠী এর কারণ জানতে চাইলেন। বিশাখা বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা প্রসবের খবর পেয়ে দাসীদের নিয়ে আলো হাতে তিনি অশ্বশালায় গিয়েছিলেন। তখন শ্রেষ্ঠী বললেন, তোমার পিতা তোমাকে ঘরের আগুন বাইরে নিতে নিষেধ করেছিলেন না? তাঁর উপদেশ তুমি অমান্য করলে কেন? বিশাখা বললেন, হ্যাঁ, নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর উপদেশ আমি অমান্য করিনি। সেই উপদেশ অনুসারেই আমি চলছি। ঘরের আগুন বাইরে না নেয়া বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, শ্বশুর বাড়ির কোনো কথা বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ না করা। আমি নিজ গৃহের নিন্দা ও কুৎসা বাইরে প্রকাশ করি না। এসময় বিশাখা তাঁর বাবার অন্যান্য উপদেশগুলোও শ্বশুরকে ব্যাখ্যা করেন। মিগার শ্রেষ্ঠী তখন নিজের ভুল বুঝতে পারেন ।
এদিকে বিশাখা বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায় পিত্রালয়ে চলে যাবার জন্য মনস্থির করলেন। বিশাখা শ্বশুরকে বললেন, এখন আমি পিতৃগৃহে চলে যেতে প্রস্তুত। তখন মিগার শ্রেষ্ঠী নিজের দোষ স্বীকার করেন এবং বিশাখাকে পিত্রালয়ে চলে যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। শ্বশুরের এ বিনীতভাব দেখে বিশাখা বললেন, আপনি বিবস্ত্র সন্ন্যাসীদের ভক্ত। আমি ত্রিরত্নের উপাসিকা। বুদ্ধশাসনে গভীর শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলের কন্যা আমি। ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবা না করে আমি থাকতে পারি না। যদি আমাকে নিজের অভিরুচি অনুযায়ী দান করতে এবং ধর্মকথা শুনতে অনুমতি দেন তাহলে আমি থাকতে পারি। মিগার শ্রেষ্ঠী তাঁর কথায় রাজি হলেন ।
এর অল্পদিন পরে বিশাখা ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে তাঁর গৃহে নিমন্ত্রণ করেন । বুদ্ধ সশিষ্য মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে যাচ্ছেন এ খবর পেয়ে বিবস্ত্র সন্ন্যাসীরাও এসে বাড়ির বাইরে অবস্থান নেন। তাঁদের শঙ্কা মিগার শ্রেষ্ঠী বুদ্ধের দীক্ষা নিলে তাঁরা দান-দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ভয়ে তাঁরা মিগার শ্রেষ্ঠীকে ভিক্ষুদের সাথে দেখা করতে নিষেধ করেন। তাঁদের উপদেশ মতো মিগার শ্রেষ্ঠী ভিক্ষুদের দেখে নিজের কক্ষে বসে রইলেন। বিশাখা যাবতীয় দান সাজিয়ে শ্বশুরকে ডাকলেন। কিন্তু শ্রেষ্ঠী বিবস্ত্র সন্ন্যাসীদের কথামতো দানকাজ শেষ করতে বলেন। বিশাখা সশ্রদ্ধ চিত্তে বুদ্ধসহ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেন। দানকর্ম সম্পন্ন হলে বিশাখা ধর্মকথা শুনতে শ্বশুরকে আহবান করেন। শ্রেষ্ঠী তখন ভাবলেন, এখন না গেলে খুব অভদ্রতা হবে। এরূপ চিন্তা করে তিনি যেতে উদ্যত হলেন। এ সময় বিবস্ত্র সন্ন্যাসীরা বললেন, শ্রমণ গৌতমের ধর্ম শুনলে পর্দার আড়াল থেকে শুনবে। কারণ এই সন্ন্যাসীরা মনে করতেন বুদ্ধের মায়াবী ক্ষমতা আছে। সেই মায়ার বলে মিগার শ্রেষ্ঠীকে মুগ্ধ করে তাঁর শিষ্য করে নেবেন।
সন্ন্যাসীদের নির্দেশমতো মিগার শ্রেষ্ঠী পর্দার আড়ালে গিয়ে বসলেন। বুদ্ধ বললেন, শ্রেষ্ঠী আপনি পর্দার অন্তরালে, প্রাচীরের অন্তরালে, পাহাড়ের অন্তরালে অথবা দিকচক্রবালের অন্তরালে যেখানেই বসুন না কেন, আমার শব্দ সর্বত্র ঘোষিত হবে। এই বলে মহাকারুণিক বুদ্ধ ধর্মদেশনা শুরু করলেন। প্রথমে শ্রেষ্ঠীর আগ্রহ না থাকলেও ক্রমে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েন। বুদ্ধের দেশনা শেষ হলে শ্রেষ্ঠী স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হন। তারপর তিনি বুদ্ধের সামনেই পুত্রবধূ বিশাখাকে জ্ঞানদায়িনী মাতা বলে সম্বোধন করে বললেন, মা তুমি এতদিনে এই সন্তানকে উদ্ধার করলে । সেই থেকে বিশাখাকে ‘মিগারমাতা' নামে অভিহিত করা হয় ।
এরপর হতে মিগার শ্রেষ্ঠীর গৃহে বিশাখার উদ্যোগে ভিক্ষুসঙ্ঘের নিত্য মধ্যাহ্ন আহারের ব্যবস্থা করা হয়। শ্রেষ্ঠী নিজেও বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। বিশাখা আঠারো কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে শ্রাবস্তীতে একটি বিশাল বিহার নিমার্ণ করে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেছিলেন। এটিকে পূর্বারাম বিহার বলা হয় । এ বিহার নির্মাণ কাজে তদারকি করার জন্য বিশাখা বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক মৌদ্গল্যায়নের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিলেন। মৌদ্গল্যায়ন পাঁচশত শিষ্যসহ বিহার নির্মাণে সহায়তা করেন। কথিত আছে যে, মৌদ্গল্যায়ন নিজের ঋদ্ধিশক্তির প্রভাবে মাত্র নয় মাসে বিহার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করান। দ্বিতলবিশিষ্ট এ বিহারের কক্ষের সংখ্যা ছিল এক হাজার। প্রত্যেকটি কক্ষ বিশাখা নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। এ বিহার দান উপলক্ষে চারমাস ব্যাপী উৎসব হয়েছিল। এর জন্য বিশাখাকে আরও নয় কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছিল। বুদ্ধ পূর্বারাম বিহারে বিভিন্ন সময়ে ছয় বর্ষাবাসব্রত পালন করেছিলেন। সে সময় বিশাখা নিত্যকর্মের মতো প্রতিদিন তিনবার খাদ্যভোজ্য, প্রয়োজনীয় নানা দ্রব্য ও ধূপ ইত্যাদি নিয়ে বিহারে যেতেন। এক সময় বিশাখা বুদ্ধের কাছে আটটি বর প্রার্থনা করেন। বুদ্ধ তা অনুমোদন করেছিলেন, এ বর গুলো বিশাখার ত্যাগ মহিমার নতুন দিক উন্মাচিত করেছে। বরগুলো হলো :
বিশাখা আজীবন বুদ্ধের কাছে আগত যে কোনো অতিথি ভিক্ষুর আহার্য দান করবেন ।
বিশাখা আজীবন ভিক্ষুসঙ্ঘকে স্নানবস্ত্র প্রদান করবেন ।
৩. বিশাখা আজীবন অসুস্থ ভিক্ষুর যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
8. বিশাখা আজীবন অসুস্থ ভিক্ষুদের পরিচর্যাকারীদেরও আহার্য দান করবেন ।
৫. বিশাখা আজীবন বিহারের অসুস্থ ভিক্ষুদের জন্য প্রয়োজনীয় পথ্য সরবরাহ করবেন।
৬. বিশাখা আজীবন ভিক্ষুদের যাগু-অন্ন দান করবেন।
৭. বিশাখা আজীবন ভিক্ষুণীদের স্নানবস্ত্র প্রদান করবেন।
বিশাখার এ বরপ্রার্থনার মধ্যে তাঁর গভীর দানচেতনা ও উদারতার প্রকাশ ঘটেছে। এভাবে বিশাখা সানন্দে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবায় নিয়োজিত হয়ে অপরিসীম পুণ্য সঞ্চয় করেন। বিশাখার বাড়িতে প্রত্যহ পাঁচশত ভিক্ষু আহার গ্রহণ করতেন। বিশাখার দশ পুত্র ও দশ কন্যা ছিল। তাঁদের প্রত্যেকেরও দশটি করে সন্তান ছিল। এভাবে তাঁরা সবাই বলশালী ও সম্পদশালী হয়ে সুখে বাস করতেন। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বিশাখা ‘মহা উপাসিকা' নামে খ্যাত হন। এই মহাউপাসিকার জীবনী হতে আমরা এ শিক্ষা পাই যে, ভোগ নয়, ত্যাগই মানুষকে মহৎ ও মহান করে। তাই সকলের দান ও ত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া উচিত ।
অনুশীলনমূলক কাজ বিশাখার পিতা বিশাখাকে কয়টি উপদেশ দিয়েছিলেন? শ্বশুরকে বিশাখা কীভাবে দীক্ষা প্রদান করেন? বুদ্ধের নিকট বিশাখা কয়টি বর প্রার্থনা করেছিলেন? সেগুলো কী কী? |
পাঠ : ৩
রাজা প্রসেনজিত
রাজা প্রসেনজিত ছিলেন কোশলের রাজা। শ্রাবস্তী ছিল কোশলের রাজধানী এবং খুবই সমৃদ্ধশালী নগরী । শ্রাবস্তীতে বুদ্ধ অনেক ধর্মোপদেশ দান করেছেন। এখানে তাঁর জীবনের অনেক স্মৃতি বিজড়িত আছে । তাই শ্রাবস্তী বৌদ্ধদের একটি প্রধান তীর্থস্থান। এর বর্তমান নাম সাহেত-মাহেত। এটি বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত। প্রসেনজিত ছিলেন কোশলের রাজা মহাকোশলের পুত্র এবং বুদ্ধের সমসাময়িক। তিনি তক্ষশিলায় লেখাপড়া করেন। লিচ্ছবি মহালি এবং মল্ল রাজপুত্র ভণ্ডুল ছিলেন তাঁর সহপাঠী। তিনি বিভিন্ন রকম বিদ্যা ও শিল্পকলা শিখে তক্ষশিলা থেকে ফিরে আসেন। পিতা মহাকোশল বিদ্যা ও শিল্পকলায় তাঁর পারদর্শিতা দেখে খুবই সন্তুষ্ট হন এবং তাঁকে কোশলের সিংহাসনে অধিকারী করান। রাজ্যভার গ্রহণ করে তিনি খুবই নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে রাজ্য শাসন করতেন। তিনি জ্ঞানী ও সাধু ব্যক্তিদের খুব ভালোবাসতেন এবং তাঁদের সঙ্গ উপভোগ করতেন। বুদ্ধের বুদ্ধত্ব লাভের পরপরই রাজা প্রসেনজিত বুদ্ধের অনুসারী হন এবং মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি বুদ্ধের উপাসক হয়ে জীবন অতিবাহিত করেন।
বুদ্ধের অনুসারী হলেও রাজা প্রসেনজিত অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল । জানা যায় তিনি একবার মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন কিন্তু বুদ্ধের উপদেশে তিনি যজ্ঞে বলি প্রদানের জন্য সে সকল পশু যোগাড় করা হয়েছিল সে সকল পশুকে মুক্তি দেন এবং পরবর্তীকালে যজ্ঞ ও পশুবলি পরিত্যাগ করেন। তিনি প্রায় সময় বুদ্ধের নিকট গমন করতেন এবং অনেক বিষয়ে বুদ্ধের উপদেশ গ্রহণ করতেন। ত্রিপিটকের অন্তর্গত সংযুক্ত নিকায়ে কোশল সংযুক্ত নামে একটি অধ্যায় আছে, সেখানে কোশলরাজ প্রসেনজিতকে উদ্দেশ্য করে বুদ্ধের অনেক উপদেশ পাওয়া যায়। এক সময় বুদ্ধ তাঁকে সীমিত আহারের উপদেশ দেন। তিনি বুদ্ধের উপদেশ পালন করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন ।
মল্লিকাদেবী ছিলেন কোশলরাজ প্রসেনজিতের স্ত্রী। তিনি এক উদ্যান পালকের কন্যা ছিলেন। কিন্তু তিনি খুবই বুদ্ধিমতি ছিলেন। রাজা তাঁকে খুব ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। যে-কোনো বিষয়ে তাঁর উপদেশ গ্রহণ করতেন। একদিন তিনি রানিকে জিজ্ঞাসা করলেন, রানি! তুমি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাস? তিনি উত্তরে বললেন, পৃথিবীতে নিজের চেয়ে আপন কেউ নেই। রানি খুবই ধার্মিক ছিলেন। তাই তিনি সত্য কথা বললেন। রাজা একথা বুদ্ধকে জ্ঞাত করলে বুদ্ধ মল্লিকার কথা সত্য বলে সমর্থন করেন। বিবাহের পর মল্লিকা এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন। কন্যাসন্তান জন্মের কারণে রাজা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে বুদ্ধ বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত করে তুলতে পারলে নারীরাও পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে, সুন্দরভাবে রাজ্যশাসন করতে পারে।
রাজা প্রসেনজিত বুদ্ধকে এতই শ্রদ্ধা করতেন যে, বুদ্ধের বংশের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তিনি খুবই উদ্গ্রীব ছিলেন। রাজা প্রসেনজিত সশিষ্য বুদ্ধকে একসপ্তাহের জন্য নিমন্ত্রণ করে উত্তম খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আপ্যায়ন করেন। সপ্তম দিবসে তিনি বুদ্ধকে প্রতিদিন তাঁর গৃহে ভোজন গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। বুদ্ধ অপরাগতা প্রকাশ করে আনন্দকে নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য বলেন। আনন্দ ভিক্ষুসঙ্ঘসহ প্রতিদিন রাজার গৃহে ভোজন গ্রহণ করতে যেতেন। রাজা ব্যস্ত থাকায় তাঁদের পরিচর্যা করতে পারতেন না। ভিক্ষুসঙ্ঘ অবহেলা ভেবে ভোজন গ্রহণ হতে বিরত থাকেন। এতে রাজা প্রসেনজিত অতীব মনোকষ্ট পান। ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবা ও বুদ্ধের বংশের সঙ্গে আত্মীয়তা করার জন্য শাক্যজাতির কন্যা বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর তিনি শাক্যরাজের কাছে দূত প্রেরণ করেন। সে সময় শাক্যরা নিজ সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক করত না। প্রসেনজিত ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী রাজা। তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে শাক্যদের বিপদ হতে পারে ভেবে তাঁরা বিকল্প ব্যবস্থা করেন। এ সময় শাক্যদের রাজা ছিলেন মহানাম। মহানামের এক কন্যা বাসবক্ষত্রিয়া নাগমুণ্ডা দাসীর গর্ভে জন্মেছিল। তাঁকে তিনি রাজা প্রসেনজিতের সঙ্গে বিয়ে দেন। বাসবক্ষত্রিয়ার এক পুত্র হয়। তার নাম বিডুঢ়ভ। বিড়ুঢ়ভ মামাবাড়িতে এসে কখনো মর্যদা পেতেন না। শাক্যরা একবার বিডুঢ়ভকে দাসীর পুত্র বলে অপমান করে। বিছুঢ়ভ এতে খুব ক্ষিপ্ত হন। তিনি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এক সময় কোশলের সেনাপতির সাহায্যে তিনি পিতা রাজা প্রসেনজিতকে সিংহাসনচ্যুত করে রাজ্য ক্ষমতা দখল করেন। প্রসেনজিত শ্রাবস্তীতে পালিয়ে যান। অল্পদিনের মধ্যে তিনি সেখানে মত্যু বরণ করেন। তারপর বিডঢ়ভ কপিলাবস্তু আক্রমণ করেন এবং শাক্যদের নির্মূল করেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরার সময় তিনি প্লাবনের জলে পতিত হয়ে সসৈন্যে নিহত হন।
রাজা প্রসেনজিতের সমকালীন প্রাচীন ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মগধরাজ বিম্বিসার, উজ্জয়িনীরাজ প্রদ্যোত, কোশাম্বীরাজ উদয়ন প্রমুখ। রাজা প্রসেনজিত এবং রাজা বিম্বিসার ছিলেন পরস্পর আত্মীয়। বিম্বিসার রাজা প্রসেনজিতের বোন কোশলদেবীকে বিবাহ করেন। রাজা বিম্বিসার উপঢৌকনস্বরূপ রাজা প্রসেনজিতের কাছ হতে কাশী রাজ্য লাভ করেন। কাশী মগধের অন্তর্ভুক্ত হয় । এতে মগধরাজ-বিম্বিসারের সাথে রাজা প্রসেনজিতের গড়ে ওঠে সৌহাদ্যময় সুসম্পর্ক। বিম্বিসার পুত্র অজাতশত্ৰু এ সময় রাজকার্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি এক সময় অন্যের প্ররোচনায় পিতাকে কারাবন্দি করেন এবং কারাবন্দি অবস্থায় রাজা বিম্বিসারের মৃত্যু হয়। এ খবর শুনে রাজা প্রসেনজিত ক্ষুব্ধ হয়ে কাশী রাজ্য ফিরিয়ে নেন। এ কারণে প্রসেনজিতের সঙ্গে অজাতশত্রুর কয়েকবার যুদ্ধ হয়। চতুর্থবারে তিনি অজাতশত্রুকে পরাজিত করতে সমর্থ হন এবং সিংহাসন ত্যাগ না করা পর্যন্ত বন্দি করে রাখেন। পরে তিনি নিজকন্যা বজিরাকে তাঁর সাথে বিবাহ দেন এবং পুনরায় কাশী রাজ্য উপঢৌকন দেন। একথা শুনে বুদ্ধ উপদেশস্বরূপ বলেন, “যে লোক জয় লাভ করে তার শত্রু বাড়ে। যে পরাজিত হয় তার মর্মবেদনা বাড়ে। কিন্তু যার জয়-পরাজয় নেই সে সর্বদা শান্তি উপভোগ করতে পারে।”
রাজা প্রসেজিতের বোন সুমনা সঙ্ঘে প্রবেশ করে ভিক্ষুণী হন এবং বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শ্রবণ ও অনুসরণ করে অর্হত্ব ফলে প্রতিষ্ঠিত হন। রাজা প্রসেনজিত এবং তাঁর স্ত্রী মল্লিকাদেবী বুদ্ধ এবং সঙ্ঘকে দান করতে খুবই ভালোবাসতেন।
প্রসেনজিত শ্রাবস্তীর জেতবনে রাজকারাম বিহার নির্মাণ করান। তাঁর প্রধান মহিষী মল্লিকাদেবীর অনুরোধে এখানে একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন। এটি ‘মল্লিকারাম' নামে খ্যাত হয়। এখানে বসে বুদ্ধ ধর্মদেশনা করেছিলেন। শ্রাবস্তীর অদূরে একটি গভীর বন ছিল। তার নাম ছিল অঞ্জন বন। রাজা প্রসেনজিত এখানে শিকার করতেন। বুদ্ধের শিষ্য গবস্পতি এখানে বাস করতেন। থেরী সুজাতা এখানে বুদ্ধের ধর্মদেশনা শুনে অর্হত্ব ফল লাভ করেন। রাজা প্রসেনজিত বুদ্ধের ধর্ম শ্রবণের পর হতে প্রাণিহত্যা পরিত্যাগ করেন।
প্রসেনজিত অত্যন্ত দানপরায়ণ ছিলেন। একবার তিনি বুদ্ধকে পাঁচশত শিষ্যসহ জেতবনে নিমন্ত্রণ করেন। তখন তিনি নগরবাসীদের ডেকে বললেন, তোমরা এসে আমার দান দেখ। নগরবাসীরা রাজার দান দেখলেন। তারপর নগরবাসীরাও সশিষ্য বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করে রাজাকে বললেন, মহারাজ, আপনি আমাদের দান দেখুন । রাজা তাঁদের দান দেখে ভাবলেন প্রজারা আমার চেয়ে অনেক বেশি দান করেছে। আমি আবার মহাদানের ব্যবস্থা করব। এভাবে রাজা ও প্রজাদের মধ্যে দানের প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতায় রাজা বারবার পরাজিত হয়ে ভাবলেন, আমি প্রজাদের মতো দান কী কখনো দিতে পারব না ?
রানি মল্লিকা এই বিষয়ে জানতে পেরে একটি মহাদানের আয়োজন করেন। সেই দানানুষ্ঠানে রাজা নিজের হাতে ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করলেন। এ মহাদানে প্রায় চৌদ্দ কোটি মুদ্রা ব্যয় হয়েছিল । বুদ্ধকে বন্দনা করে তিনি বললেন, ভন্তে, আমার এই দানে আপনাদের ব্যবহারের যাবতীয় উপকরণ আছে। রাজা আরও বললেন, যুদ্ধ ও রাজ্যবিস্তারে আমি এখন আনন্দ লাভ করি না। আমি সুখে শান্তিতে বাকি জীবন অতিবাহিত
করতে চাই। উত্তরে বুদ্ধ বলেছিলেন দানে দ্রব্য সম্ভারের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ নয়। চিত্তের একাগ্রতা ও শ্রদ্ধা ভক্তি হলো মূল । পরিবর্তীতে বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসার, বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবা, সুশাসন এবং মহতী দানকর্মের জন্য রাজা প্রসেনজিত এবং রানি মল্লিকাদেবী বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
অনুশীলনমূলক কাজ বিডুঢ়ভ কেন শাক্যদের নিধন করেছিলেন? কোন কোন রাজা বুদ্ধের সমসায়িক ছিলেন? রাজা প্রসেনজিত ও রাজা বিম্বিসারের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল? |
পাঠ : : 8 পূর্ণিকা থেরী
এই নারী জন্মজন্মান্তরের পুণ্যসঞ্চয়পূর্বক বিপসি বুদ্ধের সময় এক সম্ভ্রান্তবংশে জন্মগ্রহণ করেন। বয়ঃপ্রাপ্ত হলে পুনর্জন্মের সম্ভাবনা তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তোলে । তিনি ভিক্ষুণীদের নিকট গিয়ে ধর্ম শ্রবণ করে সঙ্ঘে প্রবেশ করেন । তিনি সম্যকরূপে শীল পালনপূর্বক ভিক্ষুণী জীবন পালন করতে থাকেন । তিনি একাগ্রতা সহকারে ত্রিপিটক অধ্যয়নপূর্বক তাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। কিন্তু অভিমানজনিত কর্মফলে তিনি গৌতম বুদ্ধের সময়ে শ্রাবস্তীতে অনাথপিণ্ডিকের গৃহের কৃতদাসের কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তাঁর নাম হয় পূর্ণিকা। কথিত আছে যে, তাঁর জন্মের পর সেই গৃহে সন্তানসংখ্যা একশত পূর্ণ হওয়ায় তাঁর নাম রাখা হয় পূর্ণা বা পূর্ণিকা ।
বুদ্ধের সিংহনাদ নামে খ্যাত উপদেশ শ্রবণ করে তিনি স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। তৎপর তিনি উদকশুদ্ধি এক ব্রাহ্মণকে যুক্তি দ্বারা স্বমতে আনতে সমর্থ হন। এতে প্রভু তাঁকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন। মুক্তি পেয়ে তিনি সঙ্ঘে প্রবেশ করে অর্হত্ব ফল লাভ করেন। ঘটনাটি এরূপ-দাসী জীবনে ভোর বেলা নদী থেকে জল আহরণ করা ছিল পূর্ণিকার নিত্যকর্ম। প্রভুর দণ্ড ও কটুবাক্যের ভয়ে তিনি শীতের ভোরেও নদীতে নেমে জল আহরণ করতেন।
তিনি যে নদীতে জল আনতে যেতেন সে নদীতে হাড়কাঁপানো শীতের ভোরে পাপমুক্ত হওয়ার জন্য এক উদকশুদ্ধি ব্রাহ্মণ স্নান করতেন। উদকশুদ্ধি হলো জলে ভিজে জীবন শুদ্ধ করার ব্রত। একদিন পূর্ণিকা ব্রাহ্মণকে শীতের ভোরে নদীর জলে ডুবে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্রাহ্মণ আমি প্রভুর ভয়ে শীতের ভোরে নদীতে নেমে জল আহরণ করি। আপনি কিসের ভয়ে হাড় কাঁপানো শীতের ভোরে স্নান করছেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “পূর্ণিকা ! আমি পাপকর্মের ফল ধৌত করার ব্রত পালন করছি। বার্ধক্য বা যৌবনে যে পাপ কর্ম করে সে স্নানশুদ্ধি দ্বারা ঐ পাপ হতে মুক্ত হয়।”
পূর্ণিকা বললেন, “স্নানশুদ্ধি দ্বারা পাপ হতে মুক্ত হয় এরূপ আপনাকে কে বলেছেন? এটি মূর্খ কর্তৃক মূর্খের উপদেশ। যদি তা হয় তাহলে নদীতে যেসব কচ্ছপ, ব্যাঙ, সাপ, কুমির ও জলচর প্রাণী আছে তাদের স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত। এরূপ তাহলে হত্যাকারী, চোর ও অকুশল কর্ম সম্পাদনকারীও স্নানশুদ্ধি দ্বারা পাপমুক্ত হবে। তাছাড়া নদী যদি পূর্বকৃত পাপ ধৌত করতে পারে তাহলে পুণ্যও ধৌত হয়ে যাবে। হে উদকশুদ্ধিক দেহ ধৌত না করে আগে মনের ক্লেশসমূহ ধৌত করুন। প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো পাপকর্ম করবেন না। যদি পাপকর্ম করে থাকেন, তাহলে দুঃখ হতে মুক্তির উপায় নেই। পলায়ন করেও মুক্তি পাবেন না। যদি দুঃখের ভয় থাকে, যদি দুঃখ আপনার অপ্রিয় হয়, তাহলে বুদ্ধ, ধর্ম ও সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করুন, শীল পালন করুন'। এরূপ যুক্তি প্রদর্শন করে পূর্ণিকা স্নানশুদ্ধির অসারতা প্রমাণ করে ব্রাহ্মণকে স্বমতে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন।
পূর্ণিকা জীবনী পাঠে ধারণা করা যায় যে, একজন সামান্য ক্রীতদাসীও যে সৎ চেতনা ও কুশলকর্মের প্রভাবে জগতে খ্যাতি লাভ করতে পারে । অধ্যাবসায় ও সাধনার বলে নারীরাও অর্হত্ব লাভ করতে পারেন।
অনুশীলনীয় কাজ পূর্ণিকা উদকশুদ্ধি ব্রাহ্মণকে কীভাবে স্বমতে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন লেখ পূর্ণিকার যুক্তি কী তুমি সমর্থন কর? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও । |
পাঠ : ৫
ভিক্ষু শীলভদ্ৰ
শীলভদ্র ছিলেন বঙ্গের আদি গৌরব। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যেমন : শাস্ত্রগুরু, ধর্মরত্ন ও জ্ঞানকর ইত্যাদি। শীলভদ্রের জন্ম ৫২৯ খ্রিষ্টাব্দ। তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার চান্দিনা অঞ্চলের তদানীন্তন ভদ্ররাজ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জানা যায় যে, তাঁর গৃহী নাম ছিল দন্তভদ্র। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা লাভ করেই তিনি শীলভদ্র নামে খ্যাত হন ।
জ্ঞানার্জনে শীলভদ্র ছিলেন আপোসহীন। তিনি অল্প বয়সেই বেদ, হেতুবিদ্যা, শব্দবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, সাংখ দর্শন ও অন্যান্য শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শৈশবকাল থেকেই জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি উৎসুক ছিলেন। রাজকীয় সম্মান ঐশ্বর্য ত্যাগ করে সত্যানুসন্ধানী হয়ে ভারতবর্ষ পরিক্রমায় বের হন। প্রাচীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। এসময় তিনি বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন করেন। বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এভাবে এক সময় তিনি পৌঁছেন নালন্দায়। নালন্দা ছিল সে সময়ের খুব উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়। বৌদ্ধবিহারকে কেন্দ্র করেই এই বিশ্ববিদ্যলয় গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধবিহারকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রবেশাধিকার ছিল । শীলভদ্রের সময় নালন্দায় দশ হাজার শিক্ষার্থী ছিল এবং দেড় হাজার শিক্ষক ছিলেন। তখন নালন্দা মহাবিহারের
অধ্যক্ষ ছিলেন আচার্য ধর্মপাল। তাঁর কাছেই শীলভদ্র বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এখানেই বৌদ্ধধর্মীয় রীতিতে তিনি উপসম্পদা গ্রহণ করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হন। তারপর গভীর সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি বৌদ্ধধর্মের সারমর্ম অধিগত করেন এবং শাস্ত্রের দুরূহ তত্ত্বের সরল ব্যাখ্যা প্রদানে পারদর্শিতা অর্জন করেন। শীলভদ্র আচার্যের কাছ থেকে ধর্ম-দর্শনের নিগূঢ়তত্ত্বের নির্যাসটুকু নিয়েই ক্ষান্ত হতেন না, তত্ত্বের গভীরে গিয়ে ধ্রুব সত্যে না পৌঁছা পর্যন্ত তিনি প্রশ্ন করে যেতেন। এভাবে তিনি জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত ও স্বচ্ছ করেন এবং বহু বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন।
শীলভদ্র এক খ্যাতিমান ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করে খুব প্রশংসা অর্জন করেন। তখন ভারতবর্ষে এরূপ তর্কযুদ্ধের প্রচলন ছিল। রাজা মহারাজারাও নানাভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত হতেন। কার রাজ্যে কত বড় পণ্ডিত বসবাস করেন এটি তাঁদের গৌরবের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো। তাই রাজা মহারাজারাও এরূপ তর্কযুদ্ধ আয়োজনে আগ্রহী হতেন। শীলভদ্র নালন্দায় অবস্থানকালে এরূপ এক ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ ভারতের এক পণ্ডিত মগধরাজ্যে উপস্থিত হয়ে তাঁর সমকক্ষ তাত্ত্বিক পণ্ডিত নেই বলে দাবি করতে থাকেন এবং নিজের মাহাত্ম্য প্রচার করতে থাকেন। তিনি ধর্ম বিষয়ক তর্কযুদ্ধে মগধের পণ্ডিতদের আহ্বান করেন। একথা শুনে মগধরাজ আচার্য ধর্মপালের কাছে দূত পাঠিয়ে জানতে চাইলেন তিনি এই তর্কযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে রাজি আছেন কি না? আচার্য ধর্মপাল তাঁর সম্মতি জানিয়ে সাথে সাথেই মগধে যেতে প্রস্তুতি নিলেন। তাঁর শিষ্য শীলভদ্র তখন নালন্দাতেই ছিলেন। তিনি আচার্যকে বিনীত অনুরোধ করে বলেন, “এই তর্কযুদ্ধে আমাকে যাবার অনুমতি দিন”। শীলভদ্রের বয়স তখন মাত্র ত্রিশ বছর। আচার্য ধর্মপাল অত্যন্ত প্রীত হলেন। তিনি ইতোমধ্যে শীলভদ্রের তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা শুনেছেন । তাই শীলভদ্রের উপর তাঁর যথেষ্ট আস্থা ছিল। তিনি শীলভদ্রকে অনুমতি দিলেন । এসময় অনেক নবীন শিষ আচার্যের এই সিদ্ধান্তে বিচলিত হন। তখন তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি নিশ্চিত যে শীলভদ্র এই তাত্ত্বিক পণ্ডিতকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে।” এই ধর্মসভায় বহু লোকের সমাগম হলো। প্রজ্ঞাপ্রসূত সূক্ষ্ম যুক্তিতর্কের মাধ্যমে শীলভদ্র তাত্ত্বিক পণ্ডিতকে পরাজিত করলেন। শীলভদ্রের পাণ্ডিত্যের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। মগধরাজ সন্তুষ্ট হয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ একটি নগরের রাজস্ব স্থায়ী বৃত্তিরূপে তাঁকে প্রদান করেন। কিন্তু শীলভদ্র এটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুর পরিধেয় ত্রিচীবরই যথেষ্ট। পরে রাজার বিশেষ অনুরোধে তিনি সেই নগর গ্রহণ করে সেখানে একটি সংঘারাম প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিহারের নামকরণ করা হয় ‘শীলভদ্র সংঘারাম বিহার'। সংঘারামের সকল ভিক্ষু-শ্রমণ মহাস্থবির শীলভদ্রের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধায় তাঁকে ‘স্বদ্ধর্ম ভাণ্ডার' বলে সম্ভাষণ করতেন।
প্রকৃতপক্ষে মহাস্থবির শীলভদ্রের সমসাময়িককালে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ আচার্য। সর্ববিদ্যায় পারদর্শী ও পণ্ডিত হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। শীলভদ্রই প্রথম বাঙালি যিনি নালন্দা মহাবিহারে এই খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন। সে গৌরবে আজও বাঙালিরা গর্ববোধ করে ।
শিক্ষাসমাপ্তির পর তিনি নালন্দা মহাবিহারে অধ্যাপনায় যোগদান করেন। আচার্য ধর্মপালের নির্বাণ লাভের পর সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে নালন্দার আচার্যপদে অধিষ্ঠিত করা হয়। ৬৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ১২৫ বছর বয়সে মহাপ্রয়াণ লাভ করেন ।
অনুশীলনমূলক কাজ শীলভদ্র কার নিকট এবং কোথায় বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা লাভ করেন? শীলভদ্রকে কেন একটি নগরের রাজস্ব স্থায়ীবৃত্তি রূপে দেয়া হয়েছিল? |
অনুশীলনী
শূন্যস্থান পূরণ কর
১. অশ্বজি'র সৌম্য চেহারা দেখে----------- মুগ্ধ হন।
২. মৌদ্গল্যায়ন ছিলেন ঋদ্ধিশক্তিতে-----------
৩. দেহ ধৌত না করে আগে মনের----------- ধৌত করুন।
৪. বিশাখার পিতা বিশাখাকে----------- উপদেশ প্রদান করেন।
৫. ----------- প্রথম বাঙালি যিনি নালন্দা মহাবিহারে এই খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সঞ্জয় বেলট্ঠীপুত্র কোন মতবাদী ছিলেন?
২. বিশাখা কার কাছে বর প্রার্থনা করেছিলেন এবং কয়টি?
৩. . পূর্ণিকাকে কেন দাসী কর্ম থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল?
৪. শীলভদ্রকে নিয়ে কেন আমরা গর্ব করি?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়ন কীভাবে বুদ্ধের অগ্রশ্রাবকের পদ লাভ করেছিলেন বর্ণনা কর ।
২. পারিবারিক শান্তি সংরক্ষণে বিশাখার পিতার প্রদত্ত দশটি উপদেশের গুরুত্ব মূল্যায়ন কর । ৩. বৌদ্ধধর্মের প্রসারে রাজা প্রসেনজিতের অবদান লিপিবদ্ধ কর।
৪. পূর্ণিকা কীভাবে দাসী থেকে ভিক্ষুণী হলেন বিস্তারিত লেখ।
৫. শীলভদ্রের জীবন ও কর্ম বর্ণনা কর ।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। মৌদগল্যায়ন কিসে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন ?
ক. জাগতিক জ্ঞানে
খ. পরমার্থ জ্ঞানে
গ. ঋদ্ধি শক্তিতে
ঘ. দৈহিক শক্তিতে
রাজা প্রসেনজিত শাক্যকন্যাকে বিবাহের উদ্দেশ্য -
i. ভিক্ষুসঙ্ঘ ভোজনালয়ে আহার গ্রহণে বিরত থাকেন বলে
ii. কাশী রাজ্য লাভের আশায়
iii. বুদ্ধের বংশের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক করা
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i
খ. i ও ii
গ. i ও iii
ঘ. i,ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
পাপিয়া তঞ্চঙ্গ্যা একজন ধার্মিক মহিলা। আর্থিক অনটনের কারণে তিনি পরের বাসায় গৃহকর্ম করেন। একদিন তিনি একজন কুসংস্কাচ্ছন্ন ব্যক্তিকে যুক্তি দিয়ে তার কাজের অসারতা প্রমাণ করে, স্বধর্মে দীক্ষিতকরতে উদ্বুদ্ধ করেন ।
৩। উল্লিখিত ঘটনাটির চরিতমালার কোন থেরীর সাথে সম্পৃক্ত ?
ক. পূর্ণিকা
গ. পটাচারা
খ. উৎপলবর্ণা
ঘ. ক্ষেমা
8। পাপিয়া উক্ত কর্ম সম্পাদন করার ফলে -
i. প্রশংসা লাভ করবেন
ii. সুগতি লাভ করবেন
iii. অর্হত্ব ফলে অধিষ্ঠিত হবেন
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i ও ii
গ. i ও iii
খ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
ক. শীলভদ্রের জন্ম কত খ্রিষ্টাব্দে ?
খ. পূর্ণিকাকে কেন দাসীকর্ম থেকে মুক্তি দেওয়া হলো ?
গ. ছক-১ এ বর্ণিত বিষয়াবলির সাথে বুদ্ধের কোন শিষ্যের মিল রয়েছে ? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক হিসেবে ছক-২-এ বর্ণিত ব্যক্তি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে যে অবদান রাখেন তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর ।
২। ঘটনা-১
রুপেন বড়ুয়া শৈশব থেকেই জ্ঞানার্জনের জন্য আগ্রহী ছিলেন। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হলে তাঁর নাম রাখা হয় ধর্মমিত্র। তিনি গভীর সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞানের বহু বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন। এছাড়াও শাস্ত্রের দুরূহ তত্ত্বের সরল ব্যাখ্যা প্রদানে পারদর্শিতা অর্জন করেন। তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সকলে তাকে সদ্ধর্মের ভাণ্ডার বলে সম্ভাষণ করেন ।
ঘটনা-২
বৃন্তা বড়ুয়া প্রতিদিন বিহারে গিয়ে ত্রিরত্নের সেবা ও পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। পরিণত বয়সে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর তাঁর পিতার দেয়া উপদেশ সাংসারিক জীবনে প্রতিফলিত করেন ।
ক. শ্রাবস্তীর বর্তমান নাম ?
খ. মৌদ্গল্যায়নকে কেন কালশৈল পর্বতে ঘাতক কর্তৃক আক্রান্ত হতে হয়েছিল ? ব্যাখ্যা কর।
গ. ঘটনা-১- এ বর্ণিত কাহিনীটি চরিতমালার কোন চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ঘটনা-২- এ বর্ণিত বৃত্তা বড়ুয়ার কর্মাকাণ্ডের প্রভাবে জন্ম-জন্মান্তরে সুগতি লাভ হবে— একথার সাথে তুমি কি একমত ? যুক্তি প্রদর্শন কর ।
আরও দেখুন...